মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০

লঞ্চডুবি

লঞ্চডুবি

- সাকিব জামাল

ঝাঁকে ঝাঁকে মৃতপাখিরা উড়ে যায় নদীর স্রোতে...
ডুবে যায় স্বপ্নরা দলে দলে সলিল সমাধিক্ষেত্রে
শিরোনাম হয় পত্রিকায় লাল অক্ষরে- লঞ্চডুবির!
সুশীল সমাজ টিস্যু দিয়ে চোখ মোছে
কর্তৃপক্ষ করে তদন্ত কমিটি
প্রতিবেদনের পাতায় পাতায়
সংখ্যাতত্ত্ব স্থান পায় মাত্র!
থেকে যায় ফিটনেসবিহীন জলযান,
অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলা, দুর্নীতি
পরবর্তী স্বপ্নভঙ্গের গল্প শোনে জনগণ!

লজ্জাসাম্য

লজ্জাসাম্য

- সাকিব জামাল

বাহারি ফুলবাগানে ভ্রমণকাহিনীর মুখরোচক গল্পে-
দেখেই 'তেঁতুল' লোভে জিভে আসতে নেই জল!
আত্মনিয়ন্ত্রণে পুরুষ, মহাপুরুষ।
'লজ্জা' বিশেষ্যে লিঙ্গান্তরে
একতরফা নারীর উপরে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা-
নির্ঘাত ভুল। অসম আচরণ।
সাম্যের গানে- লজ্জাবতীরা মাথা উঁচু করে বাঁচুক,
যখন তখন ছুঁয়ে তাকে চুপসে দিতে নেই!
পরিশীলিত চিন্তায় 'লজ্জা' ভ্রমরেরও থাকুক।


শুধু ফুলের নয়,
ভ্রমরের অভিধানেও লজ্জা থাকে, থাকতে হয়।


আমার এপিটাফ

আমার এপিটাফ

- সাকিব জামাল

সাদা পালকে মৃত্যুডানায় উড়ে উড়ে এসেছি ফিরে-
কালচক্রে সন্ধ্যাবেলায় একলা পাখির আপন নীড়ে,
মহাকালের ঘরে। হে বন্ধুবর, ঘরের কারিগর, করছি নিবেদন,
কবর চৌকাঠে - একটি 'ভালোবাসার চিহ্ন' করে দিও অঙ্কন!
যে চিহ্নে 'আদম' সুরতহাল,
মিশে রয় মহাবৈশ্বিক জৈবকণায় অনন্তকাল।
এপিটাফ আমার,
লেখা সে চিহ্নের মাঝ বরাবর-
"ভালোবাসা অনিঃশেষ, চিরকাল বেঁচে থাক।
স্লেটে লেখা বিষাদ, 'বিদায়' শব্দ মুছে যাক!"

কৃষ্ণকালো শুক্লপক্ষ!

কৃষ্ণকালো শুক্লপক্ষ!

- সাকিব জামাল

যদিও শুক্লপক্ষ...
তবু আকাশ আমার কৃষ্ণকালো!
চন্দ্রবতী, ঠিক, এক পা, দু পা করে যৌবন পায়
একটু একটু করে বাড়ন্ত রূপে জ্বলে স্নিগ্ধ আলোয়
সে আলোয় আঁধার কাটে না আমার!
পৃথিবীর বন্ধুদের নিয়ে জোছনা পোহাতে না পারলে
দূর গগনের এলিয়েনদেরও মন খারাপ থাকে।
হে মানুষের পৃথিবী, আবার তুমি স্বাভাবিক হও-
আকাশগঙ্গায় আলো ছড়ানো সব গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্রের প্রেমে
'শুক্লপক্ষের আঁধার' মুছে যাক জীবনের জয়গানে!

সব ফুলকে ভালোবাসতে নেই!

সব ফুলকে ভালোবাসতে নেই!

- সাকিব জামাল

বাহারি রঙময়তা সব ফুলের থাকে, থাকে দৃষ্টি হরণকারী পাঁপড়ির ভাজ!
থাকে ঘ্রাণের টান- কাছে ডেকে নেয় পাগল প্রাণ...
তবে, সব ফুলকে ভালোবাসতে নেই!
গুণ বিচারে-
কিছু কিছু ফুল বিষের আধার!
স্বদেশি ধুতুরা কিংবা বিদেশি ওয়াটার হেমলক
উদাহরণ অনেক আছে এমন।


গুণ বিচারে চলো ভ্রমর ফুলের পানে...

মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০

এক জোছনা রাতের চাঁদ

এক জোছনা রাতের চাঁদ

- সাকিব জামাল

কেউ আমাকে দাওগো এনে
এক জোছনা রাতের চাঁদ,
আমি তাকে ভালোবেসে
হয়ে যাবো উন্মাদ।।


তার কপালে টিপ পড়াবো
কানে পড়াবো দুল,
বর্ষার জলে ভিজে ভিজে
ফুটবে কদম ফুল।
ভ্রমর এসে ফেলবে ভেঙে
তার লাজের বাঁধ।।


তার হাসির টানে ঠোঁটের মাঝে
উঠবে নদীর ঢেউ,
প্রেমের সুরে বাঁধবো যে গান
শুনবে না আর কেউ!
একা থাকার দিন হবে বিলীন
মিটবে মনের সাধ।।


বাউলা জলজীবন

বাউলা জলজীবন

- সাকিব জামাল

পাহাড়ের ঢল নদী বেয়ে বেয়ে নিম্নমুখী যাত্রায় চলে জল।
সে স্রোতে গা ভাসাতে চায় মন- সবার, সবসময়।
তবে এ যাত্রায় মুক্তি নেই- দর্শন বলে,
যে বোঝে, সে উজানে চলে! উজানে বায় নাও-
দমের খেয়ালে ঊর্ধ্ব থেকে উর্ধ্বে...
অহম বিনাশে দেখা পায় পরমানেন্দর।
তাই, সঙ্গীসমেত মন,
চলো আনন্দ ও মুক্তির মিছিলে।


বাউলা জলজীবনে- বাও নাও উজানে উজানে।।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০

আকাশে ভাসে মেঘের কফিন!

আকাশে ভাসে মেঘের কফিন!

- সাকিব জামাল

আকাশে ভেসে চলছে টুকরো টুকরো মেঘের কফিন!
নির্বিকার আত্মসমর্পণ শেষে- হারিয়ে যাওয়া আত্মার দল,
তার সাথে মিশে আছে স্বজন হারানোর
বিষাদময় দীর্ঘশ্বাস।
এই হলো বর্তমান পৃথিবীতে-
মেঘ সৃষ্টির ফিজিক্স!
প্রাকৃতিক পানিচক্রে এখন
চোখের জলের রূপান্তর প্রক্রিয়া মুখ্য ভূমিকায়!


স্বাভাবিক মেঘ, স্বাভাবিক বৃষ্টি কবে হবে ফের?
সে অপেক্ষার দোলাচলে প্রকৃতি...

জীবন একটি সংখ্যামাত্রঃ সবুজ অথবা লাল!

জীবন একটি সংখ্যামাত্রঃ সবুজ অথবা লাল!

- সাকিব জামাল

আঁধার এবং আলোর পার্থক্য নেই পৃথিবীর বুকে এখন!
দিনে রাতে করোনার ভয়ঙ্কর ছোবলে ছোবলে
ক্লান্ত মানবজাতি আজ দিশাহীন।
প্রচন্ড ঝড়ে দমকা হাওয়ায়
অশান্ত নদীতে উথাল-পাথাল ডিঙ্গী মাঝে
সাঁতার না-জানা শংকার জীবন।
প্রথমত আক্রান্তের সংখ্যা তালিকায়।
শনাক্ত কিংবা অশনাক্ত!
তারপর কিছুদিন বাঁচার লড়াই...
অবশেষে, সুস্থ্য অথবা মৃত।
পরিণতিতে হিসাবের খাতায় বাড়ে একেকজনে একেকটি-
সবুজ অথবা লাল সংখ্যা!

পুনশ্চ, দুঃসময়ের পৃথিবীতে নিয়তি নির্ভর মানুষ। যেখানে-
জীবন একটি সংখ্যামাত্রঃ সবুজ অথবা লাল!

করোনাকালে মনে পড়ে মাকে

করোনাকালে মনে পড়ে মাকে

- সাকিব জামাল

জীবন বাঁচাতে জীবিকার প্রয়োজনে
আটকে আছি দুঃখক্রান্ত শহরে তোমার থেকে বহুদূরে।
কেবল ভার্চুয়াল জগতে তোমার সাথে কথা, দেখা, ভালো লাগে না আর!
তোমার বাস্তব স্পর্শহীনে খা খা মরুভূমি হয়ে আছে হৃদয় আমার।
অস্পষ্ট সুরে তোমাকে ডেকে ডেকে আমার কান্নার গান
পরিবর্তিত বর্তমান পৃথিবী বোঝে না!
করোনার ছোবলে বিধ্বস্ত পৃথিবীতে
বারবার কেবল তোমাকেই মনে পড়ে।
কারণে অকারণে মন চায় ডাকি- "মা, মা, ও মা।"
সর্বরোগের মহাঔষধ, সব কষ্ট বিদায়কারিনী- মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার দুঃখ
বোঝার ক্ষমতা নেই কারো, বোধহয়, সন্তান ছাড়া!
সব প্রাণীর সন্তান এখনও মায়ের কাছেই থাকে,
ব্যতিক্রম মানুষ। আজ মা-সন্তান পরস্পরে বিচ্ছিন্ন!
কী শ্বাসরুদ্ধকর বাঁকরুদ্ধ ঘটনা!


তবে এ কষ্ট নিজের মুখে তোমাকে জানাবো না, মা। কারণ
কথা বলার সময় ফোনের স্ক্রিনে তোমার চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুবিন্দু বাড়াতে চাই না আর!


মনে মনে শুধু প্রার্থনা করি,
দূর দূরান্তে পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে
ফের সব মা-সন্তানের দেখা হোক, কথা হোক
দ্রুত, বাস্তবে, অসীম আনন্দে, জড়াজড়ি করে!