মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩

তুমি কোন মাটির তৈরি গো

তুমি কোন মাটির তৈরি গো

- সাকিব জামাল

কেটে গেল বৈশাখি লগন। 
অথচ, ফোটেনি ফুল তোমার মনে!
জানতে ইচ্ছে হয় ভীষণ, 
তুমি কোন মাটির তৈরি গো?


আমি তো জানতাম, বাংলার মাটি উর্বর বেশ।
জানতাম, এখানকার প্রজাপতিরা নদীও চেনে!


যেদিকে তাকিয়েছি, দেখেছি একসময়, 
পলিমাটির বুকে-
শুয়ে থাকা লালটিপ পড়া কুসুমদল।
দেখেছি, সময়ের সঙ্গমে- 
সভ্যতা নির্মিতি'র দ্বিধাহীন অসংখ্য ভাস্কর।


আজ, সূর্য ওঠে না তোমার? 
ভুলে গেছ রুদ্রের গান?
তুমি কোন মাটির তৈরি গো?
------
উৎসর্গঃ রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। 
---------
কবিতাটি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণে প্রকাশিত।

চৈত্রসংক্রান্তি

 

চৈত্রসংক্রান্তি

আবীররাঙা ক্ষণ শুরু হবার সাথে সাথে,
বছরান্তে, চৈতালি সন্ধ্যায়-
দিগন্ত বিস্তৃত সব নীল মুছে যাক তোমার।
রাতে রাতেই শেষ হোক অন্ধকারকাল!


আসছে নতুন ভোরে, মৌঘ্রানে-
তোমার কপালে ফুটুক সৌভাগ্যের বাহারি ফুল।
বিষন্ন প্রহরসমস্ত, ঝেড়ে ফেলার প্রত্যয়ে,
হৃদয়ে জ্বলুক আরও আরও লাল শিমুল!


অতঃপর সূর্যের ডানা মেলে,
তুমি উড়ে চলো! গেয়ে ওঠো এগিয়ে যাবার গান।
সোনালী পালকে, আগামীর সময়সকল,
হোক তোমার স্বপ্ন সমান- উচ্ছাসে বহমান!


আর্তনাদ

 আর্তনাদ

- সাকিব জামাল


যতদূর চোখ যায় আমার, দেখি বেদনার নীল আকাশ!

এলোমেলো বাতাসে, জমা রাখছি যতোসব দীর্ঘশ্বাস!

হয়তো, একদিন তুমি আকাশ দেখবে।

প্রিয় প্রাসাদের জানালা খুলে- 

নেবে নাগরিক বাতাসের স্বাদ।

সেদিন আকাশ বলে দিবে, 

নীলকন্ঠ প্রেমিকের মনের গান

কেমন শনশন ঝড়ো সুরে গায়- বিরামহীন। তপ্ত তমসায়!

-------

কবিতাটি দৈনিক যায়যায়দিন এ প্রকাশিত।

বৈশাখে, মেঘের আঁচলে

 বৈশাখে, মেঘের আঁচলে...

- সাকিব জামাল


যৌবনা বৈশাখে, সোনারাঙা ফসল ওঠার কালে, 

ইচ্ছে আছে, ঝড়ের রাতে লুকিয়ে যাবো একদিন- 

দুরন্ত মেঘের আঁচলে, প্রেমে!

তুমি একটু শাড়ি পড়ো।

নীলের সাথে বন্ধুতা গড়ি খানিক। 

তারপর, হাতচুড়ির গা বেয়ে বেয়ে-

মুক্তোর দানা হয়ে ঝরে পরবো, 

যদি হাত বাড়াও!

আপত্তি নেই, তোমার আনন্দ হাসির সুরে, 

বিলীন হয়ে যাক অস্তিত্ব আমার।

মনে রেখো, ফিনিক্স পাখির কথা। আর

বারবার বৈশাখও আসে দক্ষ কৃষকের মাঠে!

প্রবাহমান কাল

 প্রবাহমান কাল

- সাকিব জামাল


কথা রাখেনি, দখিনা হাওয়া!

সখির সৌরভ আসেনি- আমার দেশে।

যেমন ছিল শীতার্ত প্রাণ, 

তেমন তেমনই আছে।

চুপ চুপ কোকিল, নেই গান আর,

এখনও এখানে বহুমাত্রিক আঁধার!



উৎসবহীন বসন্তদিন!

ফাল্গুনের তপ্ত আগুনে পোড়া মন।

শিমুলরাঙা চৈতালি চোখে- 

বিরহে নামে লোনা জলের প্রসবন।



এইতো প্রেম, আমাদের প্রেমঃ

এক ঋতুতে ফোটে ফুল, অন্যকালে যায় ঝরে!

স্বাধীনতার গান

 স্বাধীনতার গান

- সাকিব জামাল


স্বাধীনতার মানে, 

জানে বনের পাখি জানে!

ইচ্ছে খুশি-           

      উড়তে পারে, ঘুরতে পারে, 

গাইতে পারে গান।

আমার কাছে ভীষণ প্রিয়- 

পাখির সংবিধান!



পাখিদের দেখাদেখি,

লাল সবুজের ছবি আঁকি।

হবো আমি-           

      মুক্ত ভূমির মুক্ত পাখি,

স্বাধীনচেতা প্রাণ।

পাখির মতো গাইবো আমি-

স্বাধীনতার গান!

রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৩

প্রেমের কাফেলা

প্রেমের কাফেলা
- সাকিব জামাল

কামনার প্রাচীর পেরিয়ে প্রিয়তম প্রান্তরে
যাচ্ছি আমি। ভালোবাসার গন্তব্য বহুদূর। 
যতদূরে থাকে 'মুহিব্বি' আমার,
থাকে মায়াবী রোদ্দুর!
জানি, তোমার শহরেও হয়ত
মেঘলা দিনকাল এখন।
চলছে মন খারাপের
তুমুল সব আয়োজন!
এসো, সিদরাতুল মুনতাহা'র গল্প
শুনে শুনে, উড়িয়ে দেবো দুর্দিন-
শিমুল তুলোর মতো। সঙ্গী হবে? 
হয় হোক পথটুকু আমাদের যতটা কঠিন!

ঘাস বৃত্তান্ত

 ঘাস বৃত্তান্ত

- সাকিব জামাল


আমি ঘাস। ছোট বড় ঘাস। 

আমায়, ছাগলে খায়। 

গরুতে খায়...

মাঝেমধ্যে দুষ্ট নেতারাও খায়!



আমি ঘাস। ছোট বড় ঘাস। তবে,

ইচ্ছে আছে, পরজনমে- মশা হবো!

ছাগল কামড়াবো। 

গরু কামড়াবো।

সুযোগ পেলে-

সবার সাথেই শোধবোধ মেটাবো!

ক্যামোফ্লাজ

 ক্যামোফ্লাজ

- সাকিব জামাল


শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রাখে

বিরহ কিতাব, সই!

অবিরত পাঠে ক্লান্ত হয়ে

শূণ্যে ডুবে রই!

শূন্যতার মাঝে চেয়ে দেখি

এক শালিকের মুখ,

এলোমেলো নীতির বাতাস

ভাসিয়ে নেয় সুখ!

একটু দূরে অভিজাত ঘরে

আনন্দে নাঁচে চড়ুই, 

আমার শালিকের রূপ বদলে

চড়ুই হলো দুই!

তারা জোট বেঁধেছে দেহে দেহে

মন রেখে তেপান্তর,

আমি হলাম প্রবাস পথিক

আহ্! কতোদিন প্রাণখুলে বাজার করি না!

 আহ্! কতোদিন প্রাণখুলে বাজার করি না!

- সাকিব জামাল


প্রেমিকার দেয়া রুমালের মতন-

যতক্ষণ থাকো কাছে, বেশ থাকি।

একটু শূণ্যতা অনুভবে, ভুগি ফেইক ডিজিজে!

মাথা ভনভন করে, দৌড় মারি নিউরোসাইন্স হাসপাতালে।

অথচ, কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, ভালোই আছেন! 

ধীরে ধীরে হেটে আসি-

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ভাবি, মহাবিশ্ব কি একটাই?

নাকি আরও পৃথিবী আছে?

কারেন্সি ফ্রি পৃথিবী! ওয়ার ফ্রি পৃথিবী!

ভাবতে ভাবতে ঝাপসা চোখে, দেখি, 

হঠাৎ আমার নিজের ছায়াটাই মাটিতে নাই।

বুঝে ফেলি, জাদুবাস্তবতায়-

টাকার উত্তাপে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শুদ্ধ সময়।

অচিন এক দ্রোহের পৃথিবীতে ছুটে যাই তখন।

বহুমাত্রিক ক্ষোভে, মন বলে, এখানে তুমিই সেরা! 

শুনে দেই ভোঁদৌড়-

শাহবাগের চৌরাস্তায়। চিৎকার করে বলি,

এই রাশিয়া, এই আমেরিকা,

যুদ্ধ থামা। যুদ্ধ থামা!

আমায় দেখে লোকে হাসে। বিচ্ছিরিভাবে হাসে!

(হয়তো তাদের অঢেল টাকা আছে 

অথবা যুদ্ধ ভালো লাগে!)

অথচ তাদের হাসি দেখে-

আমি উন্মাদ হয়ে যাই। একা একা বলি,

আহ্! কতোদিন প্রাণখুলে বাজার করি না!