বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮

ভালোবাসার হলুদ খাম

প্রেরক... ঠিকানা বিহীন, 
প্রাপকে লেখা বালিকা নাম,
পিয়ন ভাবে মনে মনে-
সেবায়েত খোঁজে হৃদয়াশ্রম ।
ডাকে দেবীকে পুন:পুন-
                    বরাবর বালিকা প্রণাম ।।

অনুমানে সবই বোঝে বালিকা,
মনও চায় তার হতে রাধিকা,
ঠিকানা বিহীন কৃষ্ণের ইশারায়-
প্রাণ বুঝি তার উড়ে যায় যায় ।
তবু লোক লজ্জা ভয় পিছে-
                           হয় যদি বদনাম ।।

সাড়া দেয় না তবু প্রণয় ডাকে,
চিঠি আসে সময়ের বাঁকে বাঁকে,
পিয়ন বলে আর পারি না-
তুমি কৃষ্ণ নিজে ধরো না ।
মিলনের গানে শেষ হোক তব-
                    ভালোবাসার হলুদ খাম ।।

অসহায় জোছনাবতী চাঁদ

জোছনাবতী চাঁদকেও ঘুরে ঘুরে ঢেকে ফেলে-দুষ্ট কালো মেঘের ভেলা,
কালোর দৌরত্ব যখন বেড়ে যায়, কমে যায় তখন আলো ছড়ানোর খেলা ।
প্রকৃতির এ খেলা ঐ আকাশে দেখে, মিলিয়ে দেখি বিশ্ব সমাজের সাথে-
মিলে যায়! ঘুরছে ঘুরছে অন্ধকার কাল-আমাদের চারপাশে নিয়ত দিবা-রাতে ।
অসহায় চাঁদকে দেখে মায়া লাগে ভীষণ- আমার জোছনা বিলাসী মনে,
ভাবি মেঘ কেটে যাবে, স্নিগ্ধ আলো পোহাবে- আমার পৃথিবী কোন ক্ষণে?
অপেক্ষা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে কালো, সময় বয়ে যায়, কেউ ভাঙেনা বাঁধ-
গালে হাত দিয়ে কবি চেয়ে থাকে - ডুবে থাকে আঁধারে অসহায় জোছনাবতী চাঁদ!

পরকিয়ায় মেতেছে উষ্ণতা

বাপরে বাপ! সেরাম গরম !
বর্ষার সাথে বোধহয়, মেঘবালকের অভিমান চলছে চরম !
পেয়ে সুযোগ, শুন্যতা-
পরকিয়ায় মেতেছে উষ্ণতা !

প্রাকৃতিক সমাজে এ ব্যধিও মারাত্মক ।
স্বৈরাচারী আবহাওয়া মানবজাতির জন্য ধ্বংসাত্মক, বেরহম ধ্বংসাত্মক ।
যারা আমার সবুজ কেটে খায় পরিকল্পিত নগরায়ন তাড়িয়ে,
যারা আমার প্রেমিক জলবায়ু কেড়ে নেয় কার্বন নি:সরণ মাত্রা বাড়িয়ে,
মেতে ওঠে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ী, বাড়ির বারান্দায় বীরদর্পে পদচারণায়-
তারা মনহীন, শুধু ধড়বেশ মানব- উষ্ণতার পরকিয়া দেখে মজা পায়!

প্রকৃতিকে অস্বাভাবিক আচরণে বাধ্য করা মানে - আমার মানবাধিকার লংঘণ ।
ক্ষতিপুরণ চাই- দাও, আমার প্রেমের পৃথিবীকে ফের পর্যাপ্ত সবুজায়ন ।

মনমুদ্রার এপিঠ ওপিঠ

আমার মনমুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এক !
যতোই উল্টে পাল্টে দেখো - কেবলই তোমার জন্য ভালোবাসা ।
নেই কোথাও, কোন ফারাক !
আমার মনমুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এক !

দৈবিকভাবে চয়ন করে দেখো-
কেবলই তোমার জন্য ভালোবাসা ।
টোকা দিয়ে ঘুড়িয়ে দেখো-
কেবলই তোমার জন্য ভালোবাসা ।
কোনদিকে ছুঁড়ে ফেলে দেখো-
কেবলই তোমার জন্য ভালোবাসা ।
নানাভাবে সময়,অসময়ে ঝাঁকিয়ে দেখো-
কেবলই তোমার জন্য ভালোবাসা ।

কথায় বলে, মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এক-
এ আর নতুন কি- হয়তো এমনও ভাবতে পারো !
আমি দেখেছি- প্রায় দেশের বিহিত মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ভিন্ন !
তবে, বিনিময় হয় তারও ।

আমার মনমুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এক ! 
                                  মুদ্রার মানও ভালো !
নিশ্চিন্তেই তুমি, তোমার মন বিনিময় করো - 
              ছড়াক সাদা মনে ভালোবাসার আলো ।।

বোধহয় সুশীল হতে চলেছি

ইদানিং-
চোখে একটু কম দেখছি,
কানেও একটু কম শুনছি,
কন্ঠস্বরের তীব্রতা সেও কেমেছে, 
বোধহয় সুশীল হতে চলেছি!

আমজনতার স্বার্থসংশ্লিষ্ট চিন্তা ভাবনার বিবেক-
অবশ অবশ লাগে ।
আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের স্বার্থের চিন্তায়-
মনটা হঠাৎ হুংকার দিয়ে জাগে ।
পরাশক্তিদের কাছে -
সানন্দে অবনত হয়ে যাচ্ছে মস্তক ।
এ দেশের কিচ্ছু হবেনা-
গবেষণার বীনার সুরে শুধুই বাজে এই সপ্তক ।

বোধহয় সুশীল হতে চলেছি!
মা-মাটি-মানুষ ভুলে, বিশ্ব নাগরিক হতে চলেছি!!

সপ্তঢঙে চুমু তোমায়

এখন সময় কেবলই তোমার-আমার,
সপ্তঢঙে চুমু তোমায় প্রেমের উপহার !
সপ্তরঙে সাজানো, সপ্তসুরে বাজানো-
দু:সময় তাড়ানো- যুগল ভালোবাসার ।

                     (এক)
সা রে গা মা পা দা নি ভায়োলিনে বাজুক,
দেয়াল ঘিষে দাড়াও - ঠোটে-ঠোট সাজুক ।
                       (দুই)
থেমে যাক হঠাৎ বেসুরে ঝগড়ায়- শব্দ দূষণ,
তাল ফেরাতে তোমার কপালে সিক্ত নিবেদন!
                       (তিন)
নিস্তব্দ সময়ে তুমি, আমি নির্জনতায়-
এসময়ে একই উপহার বরাদ্ধ ঠোটের পাতায়!
                       (চার)
চকলেট-আইসক্রিম না দিয়ে ভাগ পারবেনা খেতে-
মনে রেখ, সেই সময়ে দু যুগল ঠোট ওঠবে মেতে!
                      (পাঁচ)
কোন কারণে তোমার কান্নার জল সইতে পারবো না-
কথা থাকলো, মুছে দিবো হাত দিয়ে, ঠোটে থামবো না!
                       (ছয়)
হঠাৎ হঠাৎ নানা ছলে সুযোগ করে বের -
রাখবো ইচ্ছেমতো তোমায় ঠোটে ধরে পুন:পুন ফের !
                       (সাত)
সর্বাঙ্গে চুমুর খেলা রঙেঢঙে চলবে জীবনভর-
চলবে সময়, চলবে তোমার-আমার স্পর্শকাতর আদর!!!

পুনশ্চ : এখন সময় কেবলই তোমার-আমার,
সপ্তঢঙে চুমু তোমায় প্রেমের উপহার ।।

আমি বহিরাগত নই

তোমার বুকে আমি বহিরাগত নই-
সময়ের প্রয়োজনে বাহিরে আগত মাত্র!
সুযোগ পেলেই তোমার জমিনে ফিরে আসবো-
এ আমার অধিকার ।

সাত সমুদ্র পাড়ি দেবার মত কঠিন প্রতিযোগিতায়-
যোগ্যতাবলে স্থান করে নিয়েছিলাম ভালোবাসার চত্ত্বরে!
তারপর ভালোবাসাবাসি দীর্ঘসময় ।
সুখ-দু:খের মেলবন্ধনে তোমাকে দিয়েছি ঠাই চিরদিনের জন্য এই অন্তরে ।
আজ অস্বীকার করতে চাও- ভালোবাসার সে ক্ষণ?
এ অবিচার প্রেমের জগতে - কিভাবে করবো গ্রহণ?

তোমাকে ভুলে থাকা সম্ভব নয়! সম্ভব কি করে আমাকে- ভুলে থাকা তোমার?
সত্যিকার ভালোবাসায় প্রাক্তন বলে কিছু নাই! সুযোগ নেই আমাকে বহিরাগত বলার!

অবশেষে বাষ্প মেঘ জল

অবশেষে বাষ্পমেঘজল - তোর পৃথিবী ভ্রমণ,
সে অপেক্ষায় চাতক মন- ছিলো, ছিলো দীর্ঘক্ষণ ।
তোর ভেজা দেহের মাটির ঘ্রাণে সময় ডুবে থাক-
চলুক - চাষবাস, বপন-রোপন, ফসল উৎপাদন - ভুলে রাখঢাক!
সিক্ত দেহের মিত্র হোক মন!
কোন বিরাম ঘড়ির আজ নেই প্রয়োজন!

ইতিহাস শোন্ -
তোর প্রতিক্ষায় আমার দীর্ঘশ্বাস যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে বাষ্প হয়েছিলো !
তোর প্রতিক্ষায় আমার ক্লান্ত মন বাষ্প শীতল করে মেঘ করেছিলো !
তোর প্রতিক্ষায় আমার অশ্রুসজল চোখ মেঘের সাথে বিনিময় করে জল তাকে দিয়েছিলো!
অবশেষে বাষ্পমেঘজল - তোর পৃথিবী ভ্রমণ!
কোন বিরাম ঘড়ির আজ নেই প্রয়োজন!

সিক্ত দেহের মিত্র হোক মন!
বাঁচুক- তোর বুকে ভালোবাসার ফুল ফোটানোর সবুজ বনায়ন ।।

আইজ কন্যা পাগল করছে লো

কন্যা খোঁপায় ফুল দেছে লো,
কন্যা কানে দুল দেছে লো,
কন্যা পায়ে নুপুর পড়ছে লো,
আহা.... দেখে ভারি সুন্দর লাগছে লো-
আইজ কন্যা পাগল করছে লো ।।


কন্যার চোখে লাজ ভরা গো-
ক্যামন ক্যামন কইরা চায়,
গালে টোলের ভাজ পড়া গো-
মনে বড় দাগ কাইটা যায় ।
ঠোটে বুঝি তার গোলাপ ফুটছে লো ।।
আহা....দেখে ভারি সুন্দর লাগছে লো-
আইজ কন্যা পাগল করছে লো ।।


হলদে রাংঙা কোমল দেহ গো-
লাল শাড়ি দেছে তাহার গায়,
তার রূপে জ্বলা আগুন দেইখা গো-
আইজ এই পরান পুইড়া যায় ।।
মন কয় ওরে লইয়া ঘর কইরবো লো-
আহা....দেখে ভারি সুন্দর লাগছে লো-
আইজ কন্যা পাগল করছে লো ।।

বোকা প্রেমিক

বোকা প্রেমিক

সাকিব জামাল

বিভ্রান্তিকর মাংসাশী নৃত্যে বেকুব ভ্রমর ভেবেছিলো,
ফুলের পাপড়ি যুগলে অনায়াসে প্রবেশ করবে তার জিভ-
পাবে ঠোটে ঠোটে ছোঁয়া!
বোকা প্রেমিক জানে না- মোড়কে অন্ধকার বিষ,
জানে না, দুই বৈদ্যুতিক তারের মাঝ পথ দিয়ে পাড়ি দেবার বাসনায়-
কতো বাদুড় মৃত্যুমুখী হয় ।

জানে না বোকা প্রেমিক, নগ্নতায়: নাগিনীর বাস!
সদা দৃশ্যমান নাভীশৃঙ্গ: মৃত্যুকুপ!
উজ্বলরূপ আগ্নেয়গিরি ত্বক: দৃষ্টি হরণকারী!

নীতিহীনতা সর্বত্র- ফুলেল পৃথিবী এখন নগ্নালয়!
লোভাতুর মাছি ভনভন করে । চলে- বাজারিদের পুজি-রুজির পাঠ উৎসব ।
বোকা প্রেমিক, জৈবিক প্রেম ক্ষ্যান্ত দাও! ক্ষ্যান্ত দাও বৈষয়িক পুজির লোভ!

করো জঙ্গলে জঙ্গলে সুশীল পাখি হয়ে 'মানবিক' কলরব ।

সোনালী কাবিনের কবি এবং আমি !

মাকে ভালোবাসতাম । মায়ের আদর, ভালোবাসাকে ভালোবাসতাম ।
মায়ের নোলক এর প্রতি ভালোবাসা শেখালে তুমি ! 
এরপর থেকে- মায়ের নোলক, চুড়ি, শাড়ি, নুপুর- সবকিছুতে মায়ের ছোঁয়া পাই । 
এখন মায়ের প্রতি ভালোবাসার পূর্ণাঙ্গরূপ আমার -বীজ বপনের এ কৃতিত্বটুকু তুমিই নাও, হে সোনালী কাবিনের কবি!

প্রেমিকাকেও ভালোবাসতাম । প্রেমিকার রূপ, যৌবন ভালোবাসতাম ।
দেহের অধিক ভালোবাসতে শেখালে তুমি ।
এরপর থেকে- জীবনের সাথে জীবনে জড়িয়ে একক আত্মা প্রেমিকা ।
এখন আত্মবিক্রয় না করতে শেখানোর চেতনা আমার - এ কৃতিত্বটুকু তুমিই নাও, হে সোনালী কাবিনের কবি !

প্রকৃতিকেও ভালোবাসতাম । শহুরে যান্ত্রিক ক্লান্ত মনে যতটুকু পারতাম ।
পাখির কাছে, ফুলের কাছে মনের কথা বলতে শেখালে তুমি ।
এরপর থেকে- প্রকৃতির যাদুতে ডুবে থাকি বেশ ।
এখন সতেজ প্রকৃতির সবুজ প্রেমিক আমি-   এ কৃতিত্বটুকু তুমিই নাও, হে সোনালী কাবিনের কবি !

সত্যকথনও ভালোবাসতাম । বৃত্ত বন্দি থেকে সবাই যেমন বাসে!
তবে মিথ্যের বেসাতির বিরুদ্ধে আমার সাহস বাড়ালে তুমি-
যখন পরন্ত বিকেল বলে দিলে তুমি দরবেশ, রাজনৈতিক নও ! কি সাংঘাতিক !
এরপর থেকে- সিদ্ধান্ত পাকা ! কবিতায় দুর্বৃত্তায়ন, কবিকে নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে ।
এখন সত্যকথা দীপ্ত কন্ঠে বলার উৎসাহের তেজ ভরা মনে আমার- এ কৃতিত্বটুকু তুমিই নাও,  হে সোনালী কাবিনের কবি !

উৎসর্গ : কবি আল মাহমুদকে ।

সব একলা পাখিরই মন চায়

সন্ধ্যায়, সব একলা পাখির মন চায়-
যুগল সমেত সে ফিরবে নীড়ে,
উদাহরনের অভাব নেই! কতো তরী ডুবে যায়-
প্রায় পৌঁছে তীরে!

আশাহত মন । তবু অপেক্ষার চোখে হালকা হালকা ঘুমে-
কেটে যায় এপাশ ওপাশ করা রাত! 
ক্ষুধিত দেহকে উদিত সূর্য বলে আলোকধারায় চুমে-
নামো কর্মব্যস্ত দুনিয়ার মাঠে- বিরহে ডুবে থাকার উপায় নেই, হয়েছে প্রভাত!

একলা পাখি ডানা ঝাপটায়- ভাবে মনে,
দুজনে কতো সময় কেটেছে স্বপ্নমাখা ফুলবনে!
কতো গেয়েছে ভালোবাসার গান মিলনের সুরে-
এখন দেখা হয়না ! কোন ভাঙনে ঝড়ে সখী বন্দি অন্যঘরে- কোন অজানা দূরে?

তবুও মন পোড়ে । তবুও মনে পড়ে । ব্যস্ততায় কিংবা অবসরে, কোলাহল কিংবা নির্জনতার ভীড়ে-
সব একলা পাখিরই মন চায়- যুগল সমেত সে ফিরবে নীড়ে!

সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮

তুমি অন্তত গোলাপের প্রেমে পড়

এই সময়ে তুমি ঘুমাতে পারো না, দেবী-
যখন তোমাকে নিরলস খুঁজে বেড়াই আমি ।
আমি কৃষ্ণচুড়ার প্রেমে পড়ি বারবার,
তুমি অন্তত গোলাপের প্রেমে পড় !
আমি সাজাই চেতনার রঙ ঐ কৃষ্ণচুড়ার লাল আভায়-
বায়ান্ন : যেখান শুরু যে মুক্তবাকের সংগ্রাম ।
তুমি নয়নে নয়ন রাখো - সমতার দৃষ্টিতে,
হাতে হাত ধরো, কদমে মিলাও কদম - প্রেরণা সৃষ্টিতে,
প্রগতির পথে মানব একা সৈনিক হতে পারে না !
মানবীকেও সহযাত্রী হতে হয় -
আমি কৃষ্ণচুড়ার প্রেমে পড়ি বারবার,
তুমি অন্তত গোলাপের প্রেমে পড় - 
আমার সাথে - অন্দরমহল থেকে রাজপথে ।
মুক্তবাক এবং প্রগতির অব্যাহত যাত্রা চলুক- সমতা ভালোবেসে ।

কবিতায় "মিথ্যা" না দুরস্ত

সবাই জেনে রাখো -
হয়তো একদিন অন্ধকারে ডুবে যাবে পৃথিবীর সমস্ত!
তখনও জেগে থাকবে সৈনিকের মতো সব "সত্যবাক্য" কারো না কারো কবিতায়।
কারন, কবিতায় "মিথ্যা" না দুরস্ত ।

কবিতা নির্মোহ, কবি নয় !
যারা কন্ঠ হারায়, কবিত্ব হারায় - তাদের কবিতায় মিথ্যা অনুপ্রবেশ করে,
তবে সে কবিতা কালোত্তীর্ণ হয়না ।
কবিও হারায়, কবিতাও হারায় ।

কেবল টিকে থাকে-
"সত্যবাক্য" কারো না কারো কবিতায়!
চিরঞ্জীব কবিতা : সত্যের বাহক ।
আর সে কবিতার কবিই সত্যের সাধক ।

বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১৮

তার চেয়ে বরং উত্তম কবিতা

যখন চলে "দু-মুঠো ভাত" সন্ধানের জীবন-মরন যুদ্ধ, 
তখন প্রেমের কবিতা নিপাত যায়, অনিচ্ছায় হয় বাকরুদ্ধ ।
তখন রাত-দিন একাকার হয় : 
সোনালী সূর্যের আভা আবেগ জাগায় না- 
অথবা রাতের চাঁদের জোছনা স্নিগ্ধ ছোঁয়া দেয়না !
ক্ষুদার যন্ত্রনার করুন রাগিনীময়- পৃথিবীর সমস্ত সময় !

মজলুমের জীবনে আবার প্রেম? প্রেমের কবিতা-
নিছক সময় অপচয়!
তার চেয়ে বরং উত্তম কবিতা- 
রাজপথে ধ্বস্তাধস্তি করে জারী করা সমতার সমন,অধিকার আদায়ের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা !
তার চেয়ে বরং উত্তম কবিতা-  
দুর্দশার জীবনে চক্রময় কক্ষপথের চারপাশের শোষকের, ক্ষুদার রুঢ় প্ররিভ্রমন অক্ষ ভেঙে ফেলা।

সোমবার, ২ জুলাই, ২০১৮

নকশি কাঁথা বোনার খুব ইচ্ছে

নকশি কাঁথা বোনার খুব ইচ্ছে-
অথচ, সুতো দেখলেই নড়াচড়া করে সোনামুখী সুই!
একে এক মিলে আর দুই হয়না-
থেকে যায় ভিন্ন মেরুর দুই!
গোপন ইচ্ছে পুরণ হয়না-
সময়ও আমাদের অনুকুলে রয়না!
শোষক শ্রেণী ভয় দেখায়,
                 সুই ভাবে- সুতোকে বাঁশ!
নকশি কাঁথা হয়না বোনা, 
                জগৎ জুড়ে হয় নির্মম-রুঢ় নকশার চাষ!

সাহস না থাকলে ঐক্য হয়না,
                          প্রেম এবং দ্রোহের মিলন হয়না,
                                               মজলুমেরদল মজলুমই থেকে যায়!
নান্দনিক নকশি কাঁথার রেঁনেসার স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয় বিচ্ছিরি চাদরের চাপায়!

যেহেতু আষাঢ়ে পূর্ণিমা রাত!

তবে, "জোছনা এবং বৃষ্টি" দুটোই চাই আমি- 
যেহেতু আষাঢ়ে পূর্ণিমা রাত!
যদি প্রকৃতি দেয় সায়- 
হয় সুসময়, আমার সুপ্রসন্ন বরাত!

চন্দ্রমুখীর সুখ দাও - বিরহ-ব্যাথায় তীরবিদ্ধ এক দেবদাস আমি!
কৃষ্ণকালো মেঘের ডানায় মনে মনে তোমার পাশে কতোদিন ঘুরি- জানে অন্তর্যামী!
আজ বাহুডোরের আড়ালে লুকাও-  জোছনায় তো ডুবেছিলাম সন্ধ্যা থেকে আজ,
এখনই নাক লুকাবো তোমার বুকে-  হোক রাতে শুরু বৃষ্টিতে ভেজার কারুকাজ ।

"জোছনা এবং বৃষ্টি" দুটোই হোক- ভালোবাসায় নেই ব্যবধান আকাশ-পাতাল ।
পেমকুঞ্জের লতায়-লতা জড়িয়ে ধরে কেটে যাক সময়, মুছে যাক বিরহের মহাকাল!

আমিও দাবা খেলতে জানি

পুতুল খেলা বোঝ: অথচ বলো- প্রেম বোঝনা!
দাদীজান, নানীজানের সাথে রসের আলাপ করো: অথচ বলো- প্রেম বোঝনা!
দুলাভাই-বেয়াইসাব এলে গায়ে ঢলে পড়ো স্বর্ণলতিকার মতো: অথচ বলো- প্রেম বোঝনা!
আমি পাড়ার ছেলে বলে বুঝি- এত্তো ছলনা!
সুন্দরী প্রতিযোগিতায়- ভোট কিন্তু আমি তোমাকে দেই!
যখন শাসনতন্ত্র নিয়ে কথা হয়- আমি কিন্তু তোমার পক্ষেই থাকি!
অথচ নায্য অধিকারটুকু্ চাইলে নাক ছিকটাও- পাড়ার ছেলে বলে!
জানো, আমার পূর্বপুরুষ সেই পলাশীর ডুবন্ত সুর্যকে বারবার উদয়ের আশায়-
জীবন দিয়েছিলো যুগে যুগে, সফলও হয়েছে এই নিকট অতীতে ।
আমিও হবো । পাড়ার ছেলে বলে- অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কোন ছাড় নাই!
এতোটুকু জেনে রেখো-
আমিও দাবা খেলতে জানি ।

সেই বর্ষার দিন কই!

সেই বর্ষার দিন কই - কোথায় সে হারিয়ে ফেলা শৈশব-কৈশরক্ষণ? 
পারতাম না বাইরে যেতে - দিনভর ঘরেই জমতো নানা আয়োজন ।

রোয়া রোয়া কাঁঠাল আর শলই ধানের খই-
খেয়ে খেয়ে ঘুরে এসে বলতাম মা'কে- আর গেলো কই?
মা-দাদী-ফুফুর দল বসতো নকশী কাঁথা বুনতে সবাই একসাথে-
পাশে বশে শুনতাম: ধাঁধার খেলা, চুটকি গল্প, পড়শিদের কথা- তাদের বরাতে!
আবার ভাই-বোনেরা লুডু খেলে কখনো কখনো কাটাতাম সময়- ভীষণ আনন্দে,
হার-জিতে মান-অভিমান-বাজি থাকতো: যে জিতবে- মাছের মাথা যাবে তার পাতে!
বাবা-চাচা-দাদা সহ সব পুরুষের দল পান-তামুক-হুক্কা সাথে নিয়ে,
কেউ বুনতো ঝাকি জাল. কেউ ঠিক করতো লাঙ্গল-জোয়াল-মই বেশ মনোযোগ দিয়ে ।
কাজের সাথে গাইতো তারা নানান ধরনের গীতি -
বর্ষার দিনে এমনই ছিলো গ্রাম বাংলার রীতি ।।

সেই বর্ষার দিন কই? আমার হারিয়ে ফেলা সেই সুখের সই!
আধুনিক দিনের শহুরে আমি- বর্ষার দিনে আজও সেই অতীতে ডুবে রই ।।