বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮

নজরুলাঞ্জলি

নজরুলাঞ্জলি

কবির আগমন-প্রস্থান স্মরণে সবার মতই আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি, স্মরি ।
তবে ফোটাতে চাই একটু ভিন্ন রঙের ফুল, জাগরণে চাই তার মত আলোকিত মানবকুল ।
আমার জাতীয় কবি, আমার প্রেমের কবি, আমার দ্রোহের কবি- 
আমার কাব্যসাধনা জগতের গুরুকুল শিরোমনি: কবি নজরুলকে-
প্রচলিত শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়,
কবিকে, আমি নিবেদন করছি "নজরুলাঞ্জলি" !
নজরুলাঞ্জলি : প্রেম এবং দ্রোহের রূপক "ফুল এবং মশাল" ।

কবির সমাধিতে আমি যেতে চাই- 
                                 ফুলেরঢালি নিয়ে এক হাতে-
                                                                     অন্যহাতে মশাল !
হৃদপিন্ডের দুই অলিন্দে দুই চেতনার রক্তরঙ -
                                   রাখতে চাই একপাশে প্রেম, 
                                                      অন্যপাশে দ্রোহের স্রোত বহাল !
শোক এবং শক্তির উভয় আবহে নিউরণ উদ্ধীপ্ত রেখে,
প্রেম এবং দ্রোহের উভয় শক্তি আন্তরে মেখে,
কবিকে, আমি নিবেদন করছি নজরুলাঞ্জলি-
                                     "ফুল এবং মশাল" ।


( সম্ভাবত, "নজরুলাঞ্জলি" শব্দটি আমার উদ্ভাবন ! )

কিশোরীর জৈষ্ঠ্যের দুপুর

কৈশরে কিশোরীমন চঞ্চল বনে বাদারে-
পাঁকা আম কাঠালের মৌ মৌ সৌরভে- জৈষ্ঠ্যের দুপুরে ভাতঘুম হয়না!
বিকেল একটু গড়াতেই চলতো আম গাছ, কাঠাল গাছ গবেষণা –
ফল পেঁকেছে বা দেরী কতো পরিনতিতে!
দুলাভাইয়ের বাড়ি বেড়াতে যাবে আম,কাঠাল সঙ্গী- 
রসের মাসে বেয়াই সাব রসের কথা কবে-
অপেক্ষা আর সয়না কিশোরীমনে !
কিশোরীর, জৈষ্ঠের দুপুরে ভাতঘুম হয়না !

এ কেমন জৈষ্ঠ্যের আয়োজন-
বুঝি, পুকুরে ঢিল ছোড়া জলের মতন কিশোরীমনের নাচন !
“আসসালামু আলাইকুম বিয়াইন সাব” কানে বাজে !
মধু মাসে প্রেমের মৌ ঘ্রানে কিশোরী মরে লাজে !

আশ্চর্যে 'আশ্চর্যবোধক' চিহ্ন নাই

এই সময়ে :
মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রচারে কারো বিবেকে-যান্ত্রিক ত্রুটি হয়না !
আশ্চর্য ।
কিন্তু, এই আশ্চর্যে কোন আশ্চর্যবোধক চিহ্ন নাই ।
বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে গেছে- জনরাণ্যে মানুষবিহীন প্রায় সব জনপদে !
ধর্মের বয়ানে মিথ্যা শুনি, কর্মের বেলায় ভন্ডেরা মুখোশ পরে সাজে ঋৃষি-মুনি!
তন্ত্রে-মন্ত্রে মিথ্যুক তান্ত্রিকের ভর, সুশীল মনেও বাস করে মিথ্যার চর !
ব্যক্তিজীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত চলছে মিথ্যার বেসাতি বেপরোয়া ।
অথচ, কোন পর্যায়ে কারো বিবেকে-যান্ত্রিক ত্রুটি হয়না !

ধ্বংসস্তুপের সময়চিত্রে - আশ্চর্যে 'আশ্চর্যবোধক' চিহ্ন রয়না !!!

জলরঙ মন

বুঝেছি আমি, তোমার জলরঙ মন,
তোমাকে পড়তে চাওয়া - তাই অসম্ভব আয়েজন!
পাতায় পাতায় রহস্য - কখনো মোনালিসার হাসি, কখনো বিরক্তিতে কুঁচকানো ভুরু!
কখনো আমার বুকে আবাস গড়ার তীব্র বাসনা তোমার, কখনো আবার দেখি উড়ু উড়ু!
প্রেম-বিরহের পাঠ উদ্ধার বোধহয়- পাতাল খুড়ে পুরোনো সভ্যতা বের করার চেয়েও কঠিন ভীষণ,
বুঝেছি আমি, তোমার জলরঙ মন!
রহস্যময়তা নারীর ভুষণ ! চোখ বলে এক, ঠোট বলে আরেক! অঙ্গে অঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন রূপ!
তবুও পুরুষমন নাঁচে অঙ্গিকুন্ডের পাশে ভালোবাসার আশায় - আমিও যুদ্ধ করি উদ্ধারে তোমার স্বরূপ!
তুমি থাকো, নিজে রাখো রহস্যেই ঘেরা - আমিও হই নাছোড় বান্ধা - চিন্তাশীল পাঠক সর্বক্ষণ ।
যদিও জানি আমি, ক্ষণে ক্ষণে বাদলায় আকাশের রঙ, বদলায় ঋতুর ঢঙ, পানি- পানির পাত্রে, গানের সুর -কন্ঠে কন্ঠে : এমনই বদলায় রহস্যময়ীর জলরঙ মন!

তবুও চায় মন মনের পাঠ - শুধু তোমাকে নিয়ে কাটুক সময় - 
জমুক রহস্যের মাঠ, তুমুল বাধা বিপত্তির হোক আমার পথঘাট!

অবাক মহাজাগতিক প্রেম সাধনা

বর্ষার জন্য মানবীর মন কাঁদে-
অথচ, প্রেমিক আটকা সন্ন্যাস বাধে!
মৌমাছি ঘুরে ফিরে উড়ে যায় প্রতি রাতে,
এমন "দর্শন" ফুল মানে কোন বরাতে ?
গুরুকে মানাতে চাও তোমরা-
কিন্তু শিষ্যের তত্ত্ব জ্ঞান যে সায় দেয়না!
বাস্তবতা বলে, সুখ পাখিও-
বৈরাগ্যের ধার কাছে না, কখনোই ধার কাছে না !

নারীদেহে সৃষ্টি তত্ত্ব রহস্য ! অবাক মহাজাগতিক প্রেম সাধনা !
                       - এই নিয়মে,
                         ভুল কিয়ামে -
দাড়ালে যে পথে - ও পথে সফলতার প্রশ্নই উঠেনা !

আমি আঁধারে রয়ে গেলাম

একটি ছায়াপথ,  সেখানে একটি নক্ষত্র, একটিই গ্রহ : তোমাকে নিয়ে আমার ভাবনার মহাকাশ !
তুমি নক্ষত্রের কক্ষপথে আমি গ্রহ ঘূর্ণায়মান - একমাত্র আমিই করি সেখানে বাস ।
এমন চলতে লাগলো - কেমন জানি তুমি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখলে : আকর্ষণ-বিকর্ষণের সাম্যাবস্থা ! অথচ, পরিবর্তিত হয় তোমার শপথ !
আমি আকর্ষণ বল বাড়াতে চেয়েছি, ভেবেছি তোমার মাঝে পতিত হবো আরও ভালোবেসে - হবে এক কক্ষপথ !
দুশ্চিন্তায় - "মন" বিজ্ঞানীর দারস্ত হলাম । দূরবীন যন্ত্র পেলাম : বিশ্বাস-অবিশ্বাস এর দোলাচাল দেখা গেলো ভীষণ !
অন্য গ্রহের উপস্থিতি দেখা গেলো - বিরহ বিষাদে আমার কৃষ্ণগহব্বরে পরিণত হবার এটিই কারণ !
তুমি পুরো আলোই সরিয়ে নিলে আমার গবেষণা আঁচ করতে পেরে । আমি আঁধারে রয়ে গেলাম !
প্রেমের মহাকাশ যুগে যুগেই গবেষণার বিশাল ভান্ডারই বটে -এ তথ্যই আবারও খুজে পেলাম !

মা দিবসের অঙ্গীকার

মা দিবসে সবাই করি-
এসো একটি অঙ্গীকার,
বৃদ্ধাশ্রম যেন না হয়-
ঠিকানা কোন মা'র ।।

বৃদ্ধ মাকে যে রাখে-নিজের থেকে দূরে,
প্রতিদানে তার দু:খ নামে-সুখ যায় উড়ে ।
এমন সন্তান মানুষ নয়রে-
সে এক ঘৃণিত কুলাঙ্গার ।।

কারও কথায়- মাকে ভুলে, যে থাকে বেখবর,
মা যদিও অভিশাপ না দেয়- তবু শান্তিহীন তার ঘর ।
ওরে অধম ভাবোরে বসে -
বৃদ্ধ হলে কি হবে তোমার  ।।

মা অখুশি হলে স্রষ্টাও অখুশি- সব ধর্মেই বলে,
কিসের লোভে মাকে ভোলো- ভোলো কোন ছলে?
সময় থাকতে মাকে দাও-
তার প্রাপ্য সম্মান উপহার ।।

( বি. দ্র. মুলত এটি গানের কথা )

বোধকরি, উদ্বাস্তু বুক!

বোধকরি, উদ্বাস্তু বুক! শীতল শীতল দুঃখ - একলা একলা বিরান ভুমি, প্রান্তর উন্মুক্ত তোমার অপেক্ষায় ।
যদি মাথা রাখো, ছাড়ো দ্রুত দ্রুত শ্বাস, উষ্ণ উষ্ণ ছোঁয়ায়, হবে সতেজ, রঙিন শস্য ক্ষেত্র - ভালোবাসায় ।

জড়িয়ে যাওয়া দীঘল চুলে 'হাত চিরুনী' লুকাবে হেথায় সেথায় বিলি কেটে, যুগলে যুগল চোখ অপলক ।
ঠোটে আঙুল খাবে! সময় জ্ঞানহীন, শিশির বিন্দু ঘাসের লেপটে পরা দেহে চমকাবে ঝলক ।

কর্ম চঞ্চল - হতে চায় সর্ব অঞ্চল! সুযোগ কোথায়- থাকবার নির্লিপ্ততার!
আসলে কিছুই নেই বলার - দোষটা আজকের আবহাওয়ার!

যদিও এই সময় গণতন্ত্রের, তবুও ভাবতে হয় - কল্পিত সুখ, হৃদয়ে জমা থাকে ধুকধুক! 
বোধকরি, উদ্বাস্তু বুক!খানিকটা মেনে নিয়েই-বোধকরি, উদ্বাস্তু বুক!

প্রেমের সময় এমন করে বদলায়

বেশ লাগলো, আশা জাগলো - দিগন্তে দৃষ্টিপাতে দেখলাম আকাশ-পাতাল মিলন খেলা ।
কাছে পেতে এগোতে থাকলাম তোমার কাছে-
কী আশ্চর্য ! তুমি দূরে সরে যেতে থাকলে !
যত আগাই - তত দূরে তোমার দেখা পাই ।
ভাবনায় পরিবর্তন আনলাম -
উল্টো ঘুরে, হাটতে থাকলাম - আমার নিজের মত !
কী আশ্চর্য ! তুমি পিছে পিছে কাছে আসতে থাকলে !
যত দ্রুত আমি উল্টো হাটছি - তত দ্রুত তুমি আমার পিছে ছুটছো !

মন পরিবর্তন প্রিয় !
প্রেমের সময় এমন করে বদলায় ।।

বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮

কবির দায়বদ্ধতা

আঁধার নেমে এলো পৃথিবীর বুকে - ভয় দেখাও?
আলোর জন্য ছুটতে জানি - বাইতে জানি নাও !

কবি আমি, কবিতা যখন লিখতে বসেছি - জেনে নাও, হে হতাশব্যঞ্জক ভীরু বর্তমান,
ভালোবাসার ছন্দে, পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় - রেখে যাব অন্তরে অন্তরে বহমান ।
মেনে নিয়েছি, কবি জীবন সংগ্রামের বন্ধুর পথ, কবি বেপরোয়া পথিক !
জেনে নিয়েছি, কবিতার খাতা যুদ্ধের ময়দান, কবিতারা সব সৈনিক !
ভয় কার, কাকে পাবো ভয় - সবাইতো মানব : হৃদয়টা হয়তো ভিন্নতায় ভরা!
কবির কাজ : মানব হৃদয়ে অবৈধ দখলদার দানবকে তাড়িয়ে সেখানে মানবের বাস নিশ্চিত করা ।
এই পৃথিবী সাজানোর জন্যই - জগতে হয়েছে পঙতিমালার অভ্যুদয়, শুরু ভালোবাসার বারতা ! 
"মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসার জাগরণ সৃষ্টি করা" - এটি নিশ্চিত কবির দায়বদ্ধতা ।

রবি কখনো অস্ত যায় না

রবি কখনো অস্ত যায় না, যায় না ডুবে ! 
বিজ্ঞান বলে, সময়ও বলে, মনও বলে- 
নিজস্ব অবস্থানেই প্রস্ফুটিত রয় পুবে !

কালের চক্রে পৃথিবীমানব দৃষ্টিপাতে যুগযুগ অন্তরের গহীনে,
দ্যাখে , ওখানে এখনো সমুজ্জ্বল রবীন্দ্রনাথ পূর্ণাঙ্গ আবেদন নিয়ে -
গল্প-কবিতা-গানে উদ্ভাসিত : সুখ-দু:খ সবরকম অনুভুতি প্রকাশে- থাকে স্মরণে ।

২৫ শে বৈশাখ থেকে ২৫ শে বৈশাখ আসে নব, নব রূপে ফিরে !
বিশ্ব কবি বিশ্বমানবের হৃদয়ে আসন আরও পোক্ত করে নেয়- 
ভালোবাসায় ভালোবাসাকে রাখে ঘিরে চিরতরে ।

রবি কখনো অস্ত যায় না- রবীন্দ্রনাথও বেঁচে থাকে : মানবের মাঝে - এই সুন্দর ভুবনে !

আরেকটি হারানো গল্প

কে রে ? আম গাছে ঢিল ছুড়লো কার বেটা ?
আসছি তবে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে- চুটিয়ে দিবো লেঠা !
কার বেটা রে ? কার বেটা ? ওখানে কার বেটা ?

গাছের মালিক ছাড়তো যতো গলা চেঁচিয়ে হাঁক- 
কান পাতিনি ওসবে আমরা, দুষ্ট বালকের ঝাঁক !
কাঁচা আম চাই ! পরে প্যাঁচাল যেদিকে নেয় নিক বাঁক !

ভাবতাম- বন্ধুরা জুটেছে, লংকা-হলুদ-পিয়াজ-লবন সব এসেছে- 
ক’টি আম হলে হবে আজ দুপুর রোদে ভীষণ শান্তির উৎসব !
কলাপাতায় ভাগে ভাগে পাবো – মাখা কাঁচা আমের প্রসাদ,
আম বাগানে বাগানে চলতো তাই - আমাদের ডানপিঠে দুষ্ট কলরব !

ফেলে আসা ছেলেবেলার এই সুখ-স্মৃতি আজ আরেকটি হারানো গল্প,
মাঝে মাঝে কড়া নেড়ে নিউরনে -  ঘুরিয়ে আনে অতীতকালে স্বল্প !

বৈশাখে কৃষকের প্রার্থনা

মেঘলার এলোমেলো কালো কেশে ঢেকে গেছে আকাশ,
দুরন্তপনামাখা শৃংখলাহীন নানামূখী বাতাস,
এ বুঝি-
অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ের পূর্বাভাস!

দুয়ারে গালে হাত বসা কৃষক,
ভাবে, ধান পেকেছে, ধান কেটেছি, আরও কতো কাজ বাকি! 
একটু দরকার আরো কয়েকটি রোদেলা দিন!
বহু বেড়েছে ফসল চাষে ঋন !

হে খোদা রহম করো,
ঝড়-বৃষ্টিকে বলে দাও- বর্ষা মৌসুমে সে আসুক ।
তোমার দয়ায় বাঁচি- বৈশাখে দাও সোনালী দিন ।
তোমার শুকরিয়া,  "ফসল তোলার সময়টুকু হোক রোদেলা রঙিন ।"

সমান সমান

কর্ম সমান তো-মজুরি সমান,
চলতে পারেনা-লিঙ্গ ব্যবধান!

সময় সমান তো-মজুরিও সমান,
চলতে পারেনা-লিঙ্গ ব্যবধান ।

ঘাম নারীরও ঝরে,ঘাম পুরুষেরও ঝরে,
মজুরিও আসতে হবে- সমান সমান দুজনের তরে!

কষ্ট দুজনের দেহই সমান পায়- ক্ষুধার যাতনাও সমান,
প্রয়োজন বোঝেনা লিঙ্গভেদ- চলতে পারে তবে কি করে বিভেদ ?

আমি নারীবাদী নই- বুঝি সমান সমান ।
আমি পুরুষবাদীও নই- বুঝি সমান সমান ।

সমতার গান সর্বত্র বাজুক,
সমান সমান অধিকারে পৃথিবী সাজুক ।।

দেখেছি এমন বৈশাখে

ঐ ডাকটি ঐ হাঁকটি ছিলো-
কাজের, ভালোবাসার, ভবিষ্যত নির্মানের ।

যখন ছোট ছিলাম-
এমন বৈশাখে দেখেছি মাঠে ব্যস্ত কৃষাণ-
হঠাৎ আকাশে মেঘ করলে হাঁক ছাড়তো-
আইলো! আইলো!! আইলো!!!

সে হাঁক ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে,
বাড়ি উঠোনে ব্যস্ত কৃষাণীর মুখে বাজতো-
"খোকা, খোকা একটু এগিয়ে আয়- আমার সাথে ধান ঘরে তোল । ( অস্পষ্ট শব্দ ছিলো- ফাজিল !) 
কলাপাতা কেটে এনে ঢেকে দে মারাই না হওয়া ধানের স্তুপ ।
'মেই' এ আয় খড়গুলো তুলি!
খুকি, খুকি- গরু-ছাগলগুলো নিয়ে আয় না মা!
মুরগীগুলো আটকে রাখ । ( অস্পষ্ট শব্দ ছিলো- ঢেমনি ! )
শাশুরিকে বলতো- মা, ভাত চড়াও! ওর বাজান আইয়া পরবে । ( অস্পষ্ট শব্দ ছিলো- বুড়ি !) 
এভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়তো অন্ধরমহল, উঠোন, মাঠ-ঘাট ।
বৈশাখের কালো মেঘের ভয়ে!

কৃষক রওনা দিতো বাড়ির পানে-
ভিজে ভিজে হুক্কায় তামুকের চিন্তাশীল সুখটানে!

লাল-নীল বৃষ্টি

প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়-
এই অন্তরে 
হৃদয় গহীনে
লাল-নীল বৃষ্টি!

আনন্দ প্রেমের লাল রঙের বৃষ্টি ।
বেদনার বিরহের নীল রঙের বৃষ্টি ।

যখন তুমি থাকো কাছাকাছি
তখন যে বৃষ্টি হয়-
তার রঙ :
লাল গোলাপের সুরভী ছড়ানো লাল ।
লাল রক্তজবার মোহনীয় টানের লাল ।
লাল কৃষ্ণচুড়ার হৃদয় কাঁপানিয়া লাল ।
লাল শিমুলের পাখি আকর্ষনের লাল ।
ভালোবাসার লাল ।

আর যখন তুমি থাকো দূরে দূরে
তখন যে বৃষ্টি হয়-
তার রঙ :
নীল শুন্যতা ভরা আকাশের নীল ।
নীল অথৈ সমুদ্র জলে হাবুডুবু খাওয়া নীল ।
নীল চোখ যুগলের অশ্রুজলের নীল ।
নীল একাকী অপরাজিতার নীল ।
বিরহের নীল ।

এভাবেই চলছে-
বৃষ্টির জলমাখা সিক্ত এ জীবন 
তোমাকে নিয়ে- 
ভাবনার জগতে লাল-নীল বৃষ্টি সারাক্ষণ ।

বিচ্ছিন্নতার রঙে বৃষ্টি

আবার ! আবার পড়ন্ত বিকেলে মেঘ এলো-
সৌখিন ডানা মেলে,
তুমিও নেমে এলে-
সবুজ ঘাসের সবুজ মাঠে নুপুর পরে,
বৃষ্টি হলো ।

ময়ূরী পেখম মেলেছিলো-
উদাস মনে
            ক্লান্ত চোখে
একলা একা হাতের মুঠোয় জল ছুঁয়েছিলে-
বেশ লেগেছিলো !

যৌবন ভরা বাতাস সেদিন দোল খেয়েছিলো ।
হালকা ঘন বৃষ্টির ফোঁটা-
ঢেউ তুলেছিলো-
শুণ্যের মাঝে নদীর মতন !
বাধ ভেঙেছিলো ।

হয়তো আজও এমন-
ছবির মতন তোমার ছবি !
উল্টো রথে ভগ্ন হৃদয়-
ব্যর্থ প্রেমিক একলা কবি !
বিরহের লোনা জলে চোখ যুগলে ঢল নেমেছে !

দাবী করছি - এ নিশ্চিত অনিয়ম- বাদল গানে !
স্বাক্ষী নাই । আবার আছে !
ঐ সবুজ জমিন ।
একদিন যুগল ভেজা ।
আজ- একা, একা !
বিচ্ছিন্নতার দুই রঙে রঙিন !!!

তুমি একটুও বদলাওনি বেলাল চৌধুরী !

কবিতা- জনারণ্যে মনে মনে যুগ যুগ ঘুরে বেড়ায়,
কবি- "তারা" হয়ে আকাশে উড়ে যায় ! 
                                   জ্বলে যায় ! 
                     মিটিমিটি করে হেসে থাকে- অনন্তকাল ।
বেদনার নীল জোসনায় পাঠককে ভাসায়, হাসায়, কাঁদায় !
কখনো ভালোবাসায়, কখনো বিরহে - চলে বয়ে সমকাল ।

আমরা আজ বেদনাহত, শোকাহত ।
কবি ছেড়ে গেলেন - কবি বেলাল চৌধুরী চলে গেলেন –
বাঙলা সাহিত‌্যের বলবো একটি সূর্যাস্ত হলো !

তবে, আকাশটি দেখছি দিব্যি নীল –অালোয় ভরা ।
ঐ তারার দেশে নতুন তারাও দেখছি - তারাটি - বেলাল চৌধুরী !
বলছি –কবির পঙতি থেকেই  : "তুমি একটুও বদলাওনি পুরোপুরি আলোর মতন ।" 
      কেবল পাখির মত উড়ে গেলে- কাঁদিয়ে ধরা ।

অথবা-
“প্রতি মুহূর্তে বদলায় জীবন
পৃথিবী অনুভব করে বিচিত্র অভিজ্ঞতা
পাখিরাও এ ডালে ও ডালে ঘুরে ঘুরে দেখে”
তুমিও ঘুরে দেখো কবি - অনন্ত জগত অনাবিল হর্ষে – 
আমরা না হয় হলাম কিছুটা নীল - তোমাকে হারানোর বিরহের পরশে !

          তবে কথা দিলাম –মনের গহীনে, 
তুমি রবে-  ভালোবাসায় নিরবে, নিভৃতে ।
                      গল্প – কবিতায়,
চির ভাস্বর প্রতিমার আলোকছটায় !

পবিত্র বৃষ্টি চাই

মন ভেজানো 
পবিত্র বৃষ্টি চাই 
চিন্তা জগতে ।

চিন্তা জগতে 
উর্ব্বরতা বাড়ুক 
সিক্ত পরশে ।

সিক্ত পরশে 
সাদা মনের চাষ 
হোক সে প্রেমে ।

জন্মাক প্রেমে
সবুজ ভালোবাসা 
পরের তরে ।

পরের তরে
হোক পুনশ্চ বৃষ্টি 
সাজাতে ধরা !

( ধারাবাহিক পাঁচটি হাইকু দ্বারা কবিতাটি নির্মিত )

শঙ্খচিল ভালোবাসা

তোর আছে মনের আকাশ নীল, 
আমার আছে ইচ্ছেগুলি মিল, 
আয় না করি ওড়াউড়ি-
হয়ে যুগল শঙ্খচিল ।।

আকশ জুড়ে উড়বো আমি - 
মুক্তমনে তা ধিনধিন, 
ভালোবেসে রাখবো তোরে - 
অন্তর কোণে চিরদিন ।
আয় না কাছে ভালোবেসে -
হোক স্বপ্নের অন্ত্যমিল ।।

দ্বিধার কাখের কলস ফেলে – 
দে ভেঙে দে ঝিনঝিন,
দিয়েছি আমি ডানা মেলে -
ভালোবাসা হোক সীমাহীন ।
আয় না পাখি দেখি লাজুক আখি-
খুলে মনের খিল ।।

প্রেমের সমাপ্তি

বেশতো ! তেমন দিলে ! যেমন দেয়- আকাশ ভরা ঐ মেঘমালা গর্জন !
বিরহের ভয় ? হি, হি ! শুনি - কি এমন হবে আমায় ছেড়ে, তোমার অর্জন !

গর্জনে- অর্জন নাই ! 
ভালোবাসায়- সব পাই !!

প্রেম-বিরহের ভাসানে - ডুবে মরতে রাজি নাই !
আমি ডুবে মরতে রাজি নাই ! সত্যি রাজি নাই ।
ভাঙ্গা-গড়ার নীতিকে স্বাভাবিকই ভাবি ।
প্রকৃতিতে এর কত্তো, কত্তো উদাহরণ দেখি দিবানিশি !

তুমি যেমন চাও - হোক তেমন! হোক তোমার-আমার প্রেমের সমাপ্তি !
বিরহে ভয় পাইনা - নিশ্চিত করে বলছি, জীবনটি কাটিয়ে দিতে পারবো দিব্যি একাকী !

সাহসিকতার ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১

সাহসিকতার ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১। বাঙালীর অস্তিত্বের অংকুরোদগম।
বায়ান্নোতে বপিত স্বাধীনতার স্বপ্নের বীজ- 
নানান রঙের মাটি চাঁপায় লুকায়িত ছিলো!
১৭ এপ্রিলেই বাঙালীর সে সুপ্ত মনের বাসনা: নতুন উদয়- নতুন উদ্যম।

স্বপ্ন আবহমান মনের গহীনে- 
স্বাধীনতার স্বপ্নতো আরও বড় স্থান দখল করে পরাধীন সব মনে!
স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন – 
তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার, 
          সাহসিকতার, 
                 নেতৃত্বের, 
                     ঐক্যের- প্রতিফলনের সমানুপাতিক চয়ন ।

সবকিছু ঠিকঠাক মিলে গেলো যেন সেদিন- 
মুজিবনগরের আম্রকাননের সবুজ চত্তরে- 
সংসদ হলো - প্রাণের শপথে-
স্বাধীনতার সূর্য হলো পূর্ব দিগন্তে উড্ডীন ।

বিশ্ব জানলো - রাষ্ট্রের উপাদানগুলো নিশ্চিত করতে আমরাও পারি!
স্বাধীনতার জন্য, সার্বভৌমত্বের জন্য – 
স্বাধীনচেতা জনগন নিয়ে, জন্মভুমি মুক্তির জন্য, সরকার গঠন করে -
বাধা-বিঘ্ন ডিঙিয়ে দুর্গম পথ পদতলে যাই মারি ।

তারপর, পরিকল্পিত এগিয়ে চলা – 
              মুক্তির সংগ্রাম, স্বীকৃতি আদায়ে যুগপথ চলা –
চলা জোর কদমে, কদমে- 
           মৃত্যু পরোয়াহীন বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্ন চরমে !

মুক্তিযুদ্ধ এবং সাহসিকতার এপ্রিলের যুগপথ প্রেরণার-
লাল-সবুজ ঝান্ডা ধরে,
বিজয় এলো, স্বাধীনতা এলো, স্বপ্ন পুরণ হলো – 
১৬ই ডিসেম্বরে, একাত্তরে ।

লালটিপ


তোমার কপালের ঐ বৈশাখি লালটিপ, 
আমার প্রেমের- প্রথম সূর্যোদয়।
এসো মিলি প্রাণে প্রাণে আজ,
দুটি হৃদয় হোক- চারুকারুময়।


প্রভাতরাঙা ঐ টিপ হোক স্বাক্ষী নিরবে,
শুরু থেকে শেষ- প্রেমে সবসময়।
ঐ বৃত্তেই রাখুক জমা মুহুর্তগুলো ঋণে,
যুগল মনের সুখসব- হয়ে স্মৃতিময়!


টিপ ঘিরেই সাঁজুক সোনালী স্বপ্ন আজ,
বাঁকে বাঁকে থাকুক- জাগ্রত হৃদয়!
মনে বাজুক কেবল সে সুরেই কোলাজ,
দুটি জীবন হোক- নিত্য ছন্দময়।

বাংলাদেশের সংবিধানে "অসমতার" কথা নাই

কতো লোকে কতো কথা বলে- 
তার মাঝে কি আমার কথা চলে ! 
যদি চলে – 
একটা কথা বলতে চাই !

বাংলাদেশের সংবিধানে "অসমতার" কথা নাই ।
রক্তের অক্ষরে লেখা সংবিধানে "অসমতার" কথা নাই ।

ধারা উনিশ : সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন ।
একটু অশুদ্ধ ভাষায়ই বলি : এই ধারার ব্যাখ্যায় আপনি কি কইবেন?

ধারা ছাব্বিশ : মৌলিক অধিকারের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি আইন বাতিল হইয়া যাইবে । 
এখন বলি : খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করণে চাকরিও-তো মৌলিক অধিকারের মর্যদাই পাইবে ।

ধারা উনত্রিশ :  প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। 
ভাবুন : এই ধারার উপধারা  (১) অস্বীকার করে- উপধারা  (৩) কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাইবে, যুক্তিযুক্ত থাকিবে ।  

আবার বলছি -
বাংলাদেশের সংবিধানে "অসমতার" কথা নাই ।
রক্তের অক্ষরে লেখা সংবিধানে "অসমতার" কথা নাই ।

ইট পাথুরে মন

যে মন ইট পাথুরে-
ওখানে ফুল ফোটেনা !
           ফুল ফোটেনা !!
               ফুল ফোটেনা !!!

বড় জোড় কিছু সবুজ শ্যাওলা জমে-
তা আঁকড়ে হয়তো জীবন চলে যেতে পারে -
                       ফুল ফোটেনা !
                       জীবন বিজ্ঞান বলে-
ফুল ফোটেনা - ইট পাথরে ।

বৃষ্টি পড়ে, সিক্তও হয়, কৃত্রিমতায় ।
হৃদয়খানা ভালোবাসাহীনই থেকে যায়- আক্ষেপ রয়ে যায় !

শ্যাওলা ভালো না বেসে. যদি ফুলকে ভালোবাসতে-
দুরত্বটুকুও আর থাকতো না!
হয়তো হতো তোমার আমার -
সুন্দর পৃথিবী !

মনটি তোমার উর্বর মাটি করো-
অপেক্ষায় আছি !
ফুল ফোটানোর আশায়-
বাঁচি, আরও কিছুদিন বাঁচি ।

একাই কাটলো রাত

অপেক্ষায়, অপেক্ষায় ক্লান্ত !
বৃষ্টির কান্নায়-
মেঘ কেটেছে, তারা হেসেছে, আকাশ ভরেছে নীল, নীল জোসনায়-
তবু, একটুও পরিবর্তন আসেনি !
মায়াহীন ঐ মনটায় !

'পাখির নীড়ে ফেরা সন্ধ্যা' থেকে-
সৌরভ সমেত ধুপধুনা আর আলোক মোমবাতি জ্বেলে-
খোলা জানালা রেখেছিলাম ।
দখিনা বাতাস এলো, আলো-ছায়া খেলা হলো, উত্তম সময় ছিলো মুখোমুখি ভালোবাসায়-
তবু, একটুও পরিবর্তন আসেনি !
মায়াহীন ঐ মনটায় !

এরপর, 
ক্রমাগত সময় বয়ে চললো...
জনপদ নির্জন হলো, নিস্তব্দতার ফিসফিস কথা বলার সময় এলো,অপেক্ষায়, অপেক্ষায়-
তবু, একটুও পরিবর্তন আসেনি !
মায়াহীন ঐ মনটায় !

বৃষ্টি, জোসনায়,
আধোআলো আধোছায়ায়, নির্জন প্রহরের নিস্তব্দতায়-
একাই কাটলো রাত!
আরও একটি একলা চলার সূর্যোদয়ে হলো আমার প্রভাত!

বিরহ পূর্বাভাস

তুমি, যেহেতু করেই দিলে পর-
আকাশে মেঘতো করবেই, দুঃস্বপ্নের বিজলী খেলা সেও চলবেই-
ঘূর্ণিঘোর আসবেই- বিচ্ছেদী ঝড়!

পর থেকে হয়তো-
হবো আরও পর ।
মেঘে মেঘে বাজবে ঘর্ষণ গান,
"তুমি-আমি"অবসান! সব কিছুই অবসান!
স্মৃতি ভুলে যাবার বৃষ্টির জলস্রোতে ভেসে-
হয়তো লুকাবো দুজনে- দুজনের ভিন্নতার দেশে!

তারপর ...
আবহাওয়া অফিস অন্য পূর্বাভাস দিবে ।

তোমার আকাশে- 
মেঘ কেটে রোদের ঝলকানি হাসবে, 
অথবা জোসনা ভাসবে ।
কেউ এসে আঁচলে লুকাবে নতুন, 
তাঁকে তুমি ভালোবেসে ছাঁয়া দিবে ।
হয়তো, দু, একটি নতুন কুঁড়িও খেলা করবে তোমার পাশে পাশে ।
হবে তোমার সুখে বাস ।

"তুমি-আমি" সম্পর্কের শেষমেষ এমনই হলো-বিরহ পূর্বাভাস!

বৈশাখী নিমন্ত্রণ

নাগরদোলার দোল লেগেছে,
আনন্দে ভাসছে মন পবন,
নতুন দিনে, নতুন গানে-
বৈশাখ করেছে নিমন্ত্রণ ।।

মধুর সুরে বাঁশি বাজে,
ঢোলে বাংলা ঢঙ ভজন,
মনের বাধা, বিবাদ ভুলে-
হলো সবে আপনজন ।।

নানান খেলায় রঙের মেলায়,
মেতেছে মোর দেশ রতন,
সুখের পাতা হালখাতা ভরা-
দুঃখের বিদায় লগন।।

নববর্ষের এই হর্ষ সময়
রয় যেন মনে সরাক্ষণ,
গানের সুরে এই কামনা-
রইল তোমায় নিরঞ্জন ।।

দুষ্ট মনে ইচ্ছে করে

দুষ্ট মনে ইচ্ছে করে-
কোকিল হয়ে বনে বনে উড়ি
কুহু কুহু সুরে ডেকে,
গাছে গাছে প্রাণ খূলে ঘুরি ।


শুনবে সব বন্ধু আজ-
আমার গান ভীষণ খুশি মনে
তাইতো মোর মন ছুটেছে
ফুলে রাঙা বসন্ত বনে ।


মন আজ বাধা ভুলে-
গড়েছে  প্রকৃতির সাথে মিতালী,
তাই আমি স্বাধীন সুরে-
গাইছি আজ বাধনহারা গীতালি!

ভাঙন ভাঙন খেলা

হঠাৎ করে-
ঐ কালবৈশাখী ঝড়ের মত
উড়িয়ে দিলে- ভালোবাসা!
ধুলির মত আছড়ে আছড়ে স্মৃতিগুলো-
তাড়িয়ে দিলে-কোন সুদূরে! হঠাৎ করে!
প্রলয়লীলায় মুছে দিলে স্বপ্ন, আশা!


আমিতো বীজ বুনে ছিলাম-
যতন করে, আপন করে,
গড়েছিলাম সবুজ করে গাছের মত বড়!
ভেঙে দিলে ডালপালা সব, ফুল-ফল সব,
কন্ঠ রোধে বন্ধ করলে মিষ্টি কলরব!
রুদ্র মুর্তি তোমার ভাঙার নেশা- স্মৃতিরা জড়সড়!


তোমার মনে প্রেম ছিলোনা-
             এইতো সেদিন!
জানতে পেরেছি-
                 আমি যেদিন-
তারপর থেকে-
চুমোয় চুমোয় সিক্ত করেছি তোমার জমিন!
চাষে হলাম মত্ত মমিন!
হাল ছাড়িনি, হার মানিনি- সবুজ আমার চাই,
সবুজ হলো, রঙিন হলো- হলো মনে ঠাঁই ।


ওটাই ছিলো আমার প্রেমের স্বর্ণযুগ ।
তোমারও কি ছিলো তাই?
শো শো শব্দে কর্কষ সুরে জবাব আসে-
মনে নাই, অত্তোসব মনে নাই!


তখনই বুঝে ফেলি-


তোমার মনের কোনে কোনে,
মেঘ করেছে কালো কালো,
"অহম আর লোভ" মিলেছে-
মধুর সব স্মৃতি খেকো- ঢেকেছে সব আলো!


তখনই বুঝে ফেলি-


এ ভাঙন ভাঙন খেলা!
       আর দেরী নেই-
            শুরু হলো-
তোমার-আমার বিদায় বেলা!!!


কালবৈশাখীর নাঁচন খেলা-
সবুজ প্রেমের বৃক্ষরাজি উপড়ে ফেলা ।

সুখ-পাখি

কথা  দিলাম  মাগো তোমায়-
অনেক  বড়  হবো,
তোমার স্বপন পুরণ করে
সুখ-পাখি এনে দেবো ।


কষ্ট-দু:খ হবে বিলীন
দেখো তুমি মা,
হাসির বন্যা বইবে সেদিন
আর কান্না করোনা ।


এবার হাসো একটু তুমি
আমায় কোলে নিয়ে,
করো তুমি আমায় দোয়া
আলতো চুমো দিয়ে ।

চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি

এক সময় দেহে কাঁচা হলুদের আভা ছিলো,
ছিলো ডাগর ডাগর চোখ যুগল - মাঝে সাদা বক রঙ!
পাপড়ি কমল ঠোট- ছিলো কচি কচি হাতের ঢঙ !
রাজহংসী পা দুটোয় নুপুরের ছন্দ খেলাও ছিলো-
ছিলো চার সুন্দর তরুনীর সব !
আজ কালচে মাটির রঙ জমেছে দেহে-
ধুলো-ঘাম মাখামাখি - যেন ভুতুরে ছবি!
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।

সোনার দেহে সাধের যৌবনও ছিলো-
কতো পুরুষের বুকে দেখেই উঠতো কাঁপুনি !
সকাল, দুপুর, বিকেলে আড্ডা ছিলো-
সঙ্গ বেধে ছিলো উচ্ছল পাড়ার বন্ধুর বাড়ি বেড়ানি ।
উল্লাস মাখা কিশোর বেলার অস্তগামী সে তেজদ্বীপ্ত রবি !
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।

কিছুদিন আগে-
শহর থেকে বেড়াতে গিয়েছিলাম গ্রামে ।
সকালে হেটেছি মেঠো পথে- শহুরে দাম্ভিকতায় !
দুপুরে অলস ঘুমে ব্যস্ত ছিলাম !
বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি আড্ডায় মেতেছি -
গল্প,কবিতা কতো কি !
এরই মাঝে  হঠাৎ পরিচয়-
সংগ্রামী এক কবির সাথে ।
কবির নাম দীপালি ।
ভাবলাম- ওর গল্প শুনি - সব-ই!
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।

আমি চৈত্রের রোদ সইতে পারি না ।
ছায়ায় বসে কবিতার খাতায় শব্দের ঝংকার তোলা সহজ !
কিন্তু শস্য ক্ষেতে স্বপ্নময়ী কবিতার চাষ ভীষণ কঠিন !
কেবল দ্রোহের কবিই পারে-
দীপালি দ্রোহের কবি ।
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।

জমি বর্গা করে-
সকালে ক্ষেতে সেওতি টানে কোমড়ে কাপড় গুজে, 
তারপর, আগাছা নিড়ানি- কষ্টের নিরন্তর পালা গানে,
বিকেল অবধি পরিচর্যা সোনালী স্বপ্নের ।
বৈশাখ এলে কেবল সে হাসে !
বাকি মাস - কষ্ট আর কষ্ট ! কষ্টের মাঝেও সে স্বপ্নে ভাসে !
তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পেলে-
ক্ষুধার যন্ত্রণা নিবারণ হয়তো হবে !
হঠাৎ, হেসে বলে, দাদা-
ক্ষুধা থেকে মুক্তি দিতে পারে কোন কবি ?
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।

আমি নিরুত্তর ।
জিজ্ঞেস করি-
তোমার স্বপ্ন কি, দিদি ?
হেসে বলে- "যতো বেশি মানুষে খাদ্য দিতে পারি যোগান !
ও-ই সাধনা, দাম হোক কম বা বেশি ভাবিনা ! 
ফসল ফলানো আমার কাজ-
চাই ক্ষুধা মুক্ত সমাজ !
ভালো লাগে নতুন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ ।
ও-টি ভালোবাসা, নাই অভিমান । "
শুনে মনে মনে ভাবি- দীপালি ভুতুরে নয়, স্বপ্নের পরি, মানবতার সেরা কবি!
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।